মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৪:৪০ অপরাহ্ন
মৎস বিভাগ ও কোষ্টগার্ডকে ম্যানেজ করে মেঘনা নদীকে ইলিশ শুণ্য করার প্রতিযোগিতা চলছে। করোনা ভাইরাসের বিপর্যয়কে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু জেলে ও স্থানীয় সিন্ডিকেট অবাধে ধরছে ইলিশ। এতে করে নিষিদ্ধ সময়েও মাছের প্রজনন রোধ ও জাটকা বিক্রি জমজমাট হয়ে পড়েছে। ইলিশের বাড়ি মেঘনায় ইলিশ শুণ্য করার ধুম চলছে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরে।
সরেজমিনে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিনই দলবদ্ধ হয়ে নদীতে নামছেন জেলেরা। আর এসব জাটকা গ্রামে গ্রামেও বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের জোরালো তদারকির অভাব ও উপকূলীয় এলাকার জনপ্রতিনিধি ও ঘাটের সন্ত্রাসী বাহিনীর মদদে নদীতে অবাধে মাছ শিকার চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত রিকশা ও ভ্যানযোগে মাছ বিক্রি করছেন জেলেরা। প্রকাশ্যে ইলিশ বেচাকেনা চললেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যেন নজর নেই। রায়পুরের খাসের হাট, চেয়ারম্যান ঘাট, সাজু মোল্লার ঘাট, শহর আলীর মোড়, চরভৈরবী, রায়পুরের চরকাছিয়াসহ মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বিকেলেও মাছ ধরা হয়েছে সরেজমিন দেখা গেছে। এই সময়ে কর্তব্যরত মৎস কর্মকর্তা এবং কোষ্টগার্ডের কেউ নদীতে ছিলেন না।
জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের অভয়াশ্রম হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা মাছ শিকারে যাচ্ছে।
বেসরকারি বিভিন্ন তথ্য মতে, লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ৬২ হাজার জেলে রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার ২৫২ জন নিবন্ধিত। কিন্তু মার্চ-এপ্রিল নিষেধাজ্ঞার এই দুই মাস ২৪ হাজার ৬৩০ জেলে সরকারি খাদ্য সহায়তা পাবেন। বাকি জেলেরা কার্ডধারী হলেও খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন না। আবার এসব জেলে নিষেধাজ্ঞার এই সময় অন্য কোনো কাজও করেন না। এ জন্য দাদনদার ও আড়তদারদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হয়। পরে দাদনদার ও আড়তদারদের চাপে পড়ে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে মাছ শিকারে যাচ্ছেন অনেকেই।
চরাঞ্চলের বাসিন্দা তারেক মাহমুদ বলেন, মৎস বিভাগের তদারকির অভাবে গ্রামে গ্রামে এখন ফেরি করে ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযান নিয়ে আরো প্রচার-প্রচারণা ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার এক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির জন্য সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে না এখনো করোনা ভাইরাসের কারনে এর সুযোগে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও নদীতীরের জনপ্রতিনিধিদের মদদে কোষ্টগার্ডের সহযোগিতায় জেলেরা অবাধে নদীতে নামছেন। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রায়পুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘অভিযান সফল করতে প্রত্যেকটি মাছঘাট ও বরফকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলেরা পর্যাপ্ত মাছ পাওয়ায় এখন কেউ কেউ গোপনে নদীতে যাচ্ছে। খবর পেলে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। ইতিমধ্যে আমরা জেল-জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
অন্যদিকে জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে জেলেদের মাঝে মানবিক খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য ৮নং দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত পদ্ধতিতে জেলে যাচাই-বাছাই করা হয়। এতে বাচাই কার্যক্রমে প্রধান অতিথি ছিলেন রায়পুর উপজেলার নারী ইউএনও সাবরীন চৌধুরী। সমন্বয়ক এর দায়িত্ব পালন করেন মৎস কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন। রায়পুরে এই প্রথম যে কোন সরকারের সামাজিক কর্মসূচির প্রতিটি সেক্টরে বাছাই কার্যক্রমে সাধুবাদ জানাচ্ছে সুবিধাভোগি ইচ্ছুকরা। আঃআলী নামে এক মৎসজীবি জানিয়েছেন, তালিকায় যদি নাম নাও উঠে তাতে দুঃখ থাকবে না কারন, ইউএনও আপা নিজে যাচাই – বাচাই করে তালিকা করবেন বলেছেন।
উন্মুক্ত পদ্ধতিতে সরকারের এই চলমান কার্যক্রম জনগন উপকৃত হবে বলে আশ্বস্ত করেন, রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরীন চৌধুরী। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কোন দল বা গোষ্ঠীর নয়, যিনি অসচ্ছল, সত্যিকারের উপকারভোগী তিনিই তালিকায় অন্তভুর্ক্ত হবেন। যতদিন আছি রায়পুরে প্রতিবন্ধকতার পরেও কোন অনিয়মের সুযোগ নেই। সঠিক নিয়মে কাজ করার জন্য জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন। ডিসি স্যারের অনুমতি পেলে জেলেদের মাঝে চাউল বিতরন করা হবে।
ল/আ, বার্তা বিভাগ, মো.ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ