বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন
পরিচয়টা ২০১০ সালের দিকে। লক্ষ্মীপুর সদর থানায় পিএসআই (শিক্ষানবিশ সাব ইন্সপেক্টর) হিসেবে যোগদানের কয়েকদিন পরেই। দায়িত্বরত অবস্থায় আলাপকালে যখন শুনলাম পিএসআই সোলায়মান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় অনার্স ও মার্ষ্টাস (ফার্ষ্ট ক্লাস সেকেন্ড) ও রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে এমপিএস(মাষ্টার ইন পুলিশ সায়েন্স) ডিগ্রি তেও ফার্স্ট ক্লাস উর্ত্তীন্ন হয়ে এখন পুলিশে চাকুরী নিয়েছেন। তখনই কৌতুহলটা আরো বাড়লো, অমায়িক ব্যবহার এর কারনে সম্পর্কটা আরো বাড়লো। বন্ধু ও একজন বড় ভাইয়ের মতই যাচ্ছিল দিন। এরই মধ্যে এ সম্পর্কের মাঝে পিএসআই শাহাদাত মটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে মারা যায়। পরে বদলী হয়ে সিএমপিতে চলে যাওয়ার পরেও যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। এরই মধ্যে যোগ্যতা ও মেধার কারনে সিএমপিতে একাদিকবার পুরস্কার ও বিভাগীয় পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টর হয়। একদিন শুনলাম পদোন্নতি নিয়ে লক্ষ্মীপুর আসলেন । ততদিন একজন জনগনের সেবক ও চৌকশ পুলিশ অফিসারে পরিনত হয়েছেন। ১ম পোস্টিং সদর সার্কেল ইন্সপেক্টর। যোগদানের পরপরই পুলিশ সুপারের দিক নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা টিমের নেতৃত্ব দিয়ে লক্ষ্মীপর জেলার চাঞ্চল্যকর শিশু নুসরাত হত্যা মামলার আসামীকে অভিযান চালিয়ে সুদুর খুলনা থেকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশের মুখ উজ্বল করেছেন এই চৌকশ অফিসার সোলায়মান। সেদিন বিশেষ প্রয়োজনে পুলিশ সুপার মহোদয় এই অফিসার এর উপর আস্থা রাখেন। আর আস্থায় মিলল অভিযানের সফলতা।
এরপরই আসেন আলোচনায়। এরপর বিশেষ সময়ে ডিবির অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে বিভিন্ন সফল অভিযান করে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরেন। এরই ফলস্বরুপ লক্ষ্মীপুর শহর ফাঁড়িতে বদলী হন। শুরু হয় লক্ষ্মীপুর শহরকে চোর ও মাদকমুক্ত করার অভিযান। যোগদানের পরেই মানুষের আস্থা অর্জন করে শহরকে অপরাধমুক্ত করে তোলেন। আর এসকল অর্জনের পেছনে সদর সার্কেল (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) আনোয়ার হোসেন এর দিকনির্দেশনা রয়েছে।
এই সময়ে চোরাইকৃত মোট ১০ টি মোটরসাইকেল উদ্ধার ও মোটরসাইকেল চুরির নব্য গ্যাং গ্রুপ ডিটেকশন সহ মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান রামগন্জের ওমর ফারুক ওরপে হাজীগন্জের ফারুককে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনেন ।তার বিরুদ্ধে কুমিল্লা, চাটখিল, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর সদর সহ বিভিন্ন থানায় ২০ টির অধিক মামলা রয়েছে।তার সেকেন্ড ইন কমান্ড আলেকজান্ডার এর মিশুক মিশুকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনেন।
আর এসব কাজ করতে গিয়ে তিনি পেয়েছেন পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর হুমকি। ফেসবুকে তারে হুমকি দেওয়ার পরও তিনি চোরদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন।
অন্যান্য পেশাদার মোটরসাইকেল চোর রাজীব,রুবেলসহ আরো অনেক মোটরসাইকেল চোরদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনেন।
অসংখ্য চোরাই মোবাইল উদ্বার করে প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার এর বাসা থেকে চুরি যাওয়া সরকারি ল্যাপটপ,এলইডি টিভি, আয়রন উদ্ধার করে দিয়ে সদর উপজেলা ইউএনও সাহেবের প্রশংসা অর্জন করেন।
লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক এর ছাত্রের চুরি যাওয়া ল্যাপটপ,ডিএসএলআর ক্যামেরা ও আয়রন উদ্ধার করে আসামীদের আইনের আওতায় আনেন।
জৈনক ব্যক্তির বাসা থেকে চুরির ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাটির নিচ থেকে ১০ ভরি স্বর্ণ উদ্বার করে চোরকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করে শহরবাসীর প্রশংসা পান। ফলস্বরুপ মাননীয় পুলিশ সুপার পুরস্কৃত করেন। আর এসকল সফলতা তৎকালিন ওসি লোকমান হোসেনের সহযোগিতা ও প্রেষনা প্রদানের কারনে সক্ষম হয়েছে।
কিছুদিন পরে জেলা গোয়েন্ধা পুলিশের ইন্সপেক্টর হিসেবে পদায়ন হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বদলীর খবরে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। শহরের মানুষ যেন মেনেই তার বদলী মেনেই নিতে পারেনি। চুরি ও অপরাধ মুক্ত করতে যে অফিসার দিন রাত রাস্থায় ছিল তার বদলিতে হতাশ হয়ে পরে মানুষ।
পরবর্তিতে ডিবিতে তিনি দায়িত্বরত অবস্থায় শিশু মিনহাজ এর অপহরনের ১০ ঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করে পরবর্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে (মিনহাজের অভিভাবক মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ায়) অভিভাবকের স্থানে নিজের নাম এন্ট্রি করা । এই উদ্ধার সফলতা লক্ষ্মীপুরবাসীর প্রশংসা অর্জন করেন।
মদ, বিয়ার, ইয়াবা, গাজাসহ বিভিন্ন চোরাই মটরসাইকেল উদ্ধার করে জনগনের সেবায় একধাপ এগিয়ে যেতে লাগলেন।
সর্বশেষ কুশাখালী ইউপিতে খুনসহ ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটন। দীর্ঘ ৭মাস মামলাটি চন্দ্রগঞ্জ থানায় থাকার পর অগ্রগতি না পেয়ে পুলিশ হেড কোয়াটার্সের হস্তক্ষেপে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে জেলা ডিবির উপর তদন্তভার দেওয়া হলে স্বল্পসময়ে এই ইন্সপেক্টর সোলায়মান আসামীদের গ্রেফতার করে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করেন।
তাছাড়া ঘটনাস্থল থেকে লুণ্ঠিত মোবাইল উদ্বার করেন। এর ফলস্বরুপ জেলা পুলিশ সুপার পুরস্কৃত করেন।
এমন একজন চৌকশ পুলিশ অফিসার যিনি সাংবাদিকতার মত বিষয়ে ডিগ্রী নিয়েও মানবতার সেবায় পুলিশের দায়িত্বে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। যিনি নিজের অসুস্থ নবজাতক বাচ্চাকেও দেখতে যেতে পারেন নি, নিজের অসুস্থ স্ত্রীকেও চিকিৎসা করাতে পারেননি দায়িত্বের কারনে। পেয়েছেন অপরাধীদের রক্তচক্ষু আর হত্যার হুমকি। আর সে হুমকি উপেক্ষা করেও শহরের মানুষের কথা ভেবে তিনি কাজ করেছেন।
সে বন্ধুসুলভ অফিসার সম্প্রতি পুলিশ লাইনে বদলী হয়েছেন। আমরা আশা করবো খুব শীঘ্রই জেলার মানুষের কল্যানে, আইন-শৃংখলার উন্নয়নে দায়িত্ব পালন করবেন। শুধুমাত্র একজন সাংবাদিক প্রিয় ভাই হিসেবে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে লিখতে বাধ্য হয়েছি। ভালো থাকবেন ভাই। আরো সাফল্য অর্জনের আশা করছি।
লেখক-
মো: নজরুল ইসলাম দিপু
নির্বাহী সম্পাদক
দৈনিক লক্ষ্মীপুর আলো।