শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০৩:১১ পূর্বাহ্ন
লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে গরুর খামার গুলোতে করোনার ব্যপক প্রভাব পড়েছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় খামারীরা দুধ বিক্রি করতে পারছে না। এতে তার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।মানবেতর জীবনযাপন চলছে।
জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, কমলনগর, রামগতির বিভিন্ন খামার মালিকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে কোম্পানি ও হোটেল গুলো এখন দুধ নিচ্ছে না। ফলে খামারের আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণ ও কম দামে দুধ বিক্রি করে লোকসানে পড়ছেন। তাই ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের সুদ মৌকুফ ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রনোদনা ফান্ড দিতে অনুরোধ করেন।
লক্ষ্মীপুর জেলায় ছোট বড় প্রায় ৬শত গরুর খামার আছে। এরমধ্যে প্রায় ৮০টি বড় খামার। যেখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। কিন্তু সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, মিষ্টি দোকানসহ প্রায় সব বন্ধ থাকায় দুধ নিচ্ছেন না কেউ। যে কারণে খামারীদের উৎপাদিত দুধ কম দামে বিক্রি ও খামারের আশপাশের মানুষের মধ্যে বিতরণ করছেন খামারীরা। এছাড়া পরিবহন বন্ধ থাকায় গরুর খাবার সংকটও দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি খামার পরিচর্যাকারীদের বেতনও ঠিকমত দিতে পারছেন না খামার মালিকরা। এমন অবস্থা জেলার প্রায় প্রতিটি ফার্মের।
৩নং চরমোহনা ইউনিয়ন এর দুগ্ধখামারী জাহাঙ্গীর বলেন,ন্যায্যমূল্যে দুধ বিক্রি না করতে পেরে শ্রমিকদের মুজরি ও পরিবহন সংকটে গরুর খাবার নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। আগে প্রতিকেজি দুধ ৫০ থেকে ৭০ টাকায় আর এখন সেখানে প্রতিকেজি ২৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। যেই ক্রেতারা আসেন তারা বলেন, এখন দুধের কম দাম বিধায় খামারে দুধ কিনতে এসেছেন। এ দুধ নিয়ে তার পরিবারের জন্য রাখবেন এবং আত্মীয় স্বজনদের দেবেন।
লামচর ইউনিয়ন এর গোখামারী সোলেমান বলেন, ফার্ম দেখাশুনা ও পরিচর্যাকারীরা বলেন, করোনা ভাইরাস আসার আগে তারা ৫০ থেকে ৭০টাকা কেজিতে দুধ বিক্রি করতেন। যা এখন ২৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। অনেক সময় দুধ বিক্রি করতে না পেরে স্থানীয়দের মধ্যে বিলিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া দোকান বন্ধ থাকায় গরুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে গো খাদ্যের দাম। দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে গরুর খাবারসহ তাদের বেতনাদি দিতেন খামার মালিকরা। কিন্তু এখন ঠিকমত বেতন দিতে পারছেন না। তাই সরকারের এসব খামার মালিকদের উপর দৃষ্টি দেবার অনুরোধ তাদের।
রামগতির বড়খেরি ইউনিয়নের গো-খামারী রমযান আলী বলেন, প্রতিমাসে খামারে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার বেশি খরচ। এখন সে খরচ মেটানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। গাড়ি ও দোকান বন্ধের কারণে গরুর খাবার আনতে পাচ্ছেন না। স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসকসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন সরকারী সহযোগিতার পাশাপশি ব্যাংকের নেওয়া ঋণের সুদ মৌকুফের। পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষের মাঝে সরকার যে সহয়তা দিচ্ছে, সে তালিকায় খামারীদের থেকে ন্যায্যমূল্যে দুধ কিনে দেবার অনুরোধ জানান।
সদর উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীপুরে গ্রামের গো-খামারী শাহজাহান বলেন, তার খামারে ৩০টার অধিক গরু রয়েছে। প্রতিদিন এ সব গরুর পেছনে ব্যয় চার হাজার টাকার উপরে। তিনি দশ দিনের খাবার মজুদ করতে পেরেছিলেন। তবে সে খাবার প্রায় তার শেষ পর্যায়ে। যে সব দোকান থেকে তিনি খাবার আনতেন তার প্রায় সব গুলোই বন্ধ। যে সব দোকান খোলা থাকছে তারা গো-খাদ্যের দাম চাচ্ছে অধিক। ফলে আগামী দিন গুলো কি ভাবে যে পার করবেন এবং গরু গুলোকে বাঁচিয়ে রাখবেন সে চিন্তায় তার ঘুমও আসছে না। তিনি আরো বলেন, দরিদ্র মানুষের জন্য যেমন খাদ্য সহযোগিতা প্রদান করছে সরকার, তেমনি প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের মাধ্যমে গো-খামারীদের কাছে বাজার মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করারও দাবী জানান।
রায়পুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃআতাউর রহমান বলেন, রায়পুর প্রায় ছোট – বড় মিলে ১৫০টি গো- খামার রয়েছে, সাময়িক সময়ে তারা একটু খারাপ আছে। তাদের উৎপাদিত দুধ এখন কোথাও দিতে পারছেন না। তাই দুধ নষ্ট না করে ঘি তৈরি করে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী কিছু প্রনোদনা আসতে পারে এবং তখন খামারীরাও কিছু পাবে বলে মনে করেন।