প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকার কারণে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার অধিকাংশ সুপারি’র বাগান বিস্তৃর্ত। ব্যবসায়ীগণ সুপারি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসার উদ্দেশ্যে নিয়ে যেতো। এমনকি সুপারি দেশের বাহিরেও রপ্তানি করা হয়ে থাকে। সুপারি বিদেশে রপ্তানি করার ফলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়। এ ছাড়াও সুপারির খোল ও বাইল থেকে বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাচামাল হিসেবেও ব্যবহুত হয়। এ জেলার সুপারি আকারে বড় এবং খেতে সুস্বাদু।
রাখি মাল ব্যবসায়ী জুটন বলেন, রায়পুর উপজেলায় বছরে একশ’ কোটি টাকার সুপারির ব্যবসা হয়, সুপারি নিয়ে ব্যবসায়ীরা এবার ভালো দাম পেয়ে তাদের মুখে হাঁসি ফুটছেলো কিন্তুু গত মাস থেকে পরিবহন সংকট, ইমপোর্টাররা করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ও সরকারি কড়াকড়ি আরোপের কারনে রায়পুরে আসতে পারেনি । গত বছর সুপারি ভিজিয়ে ব্যবসায়ীদের যে লোকসান হয়েছে এ বছর তা পুষিয়ে নিতে পারবে ভেবেছিলো। এ ফসলকে ঘিরে রায়পুরে বছরে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
গত বছর বাজার থেকে প্রতি কাহন সুপারি ৭শ থেকে ৮শ’ টাকা দরে কিনে ব্যবসায়ীরা ভিজিয়ে রাখার পর ৩শ – ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। এ ব্যবসায় বিনিয়োগ করার পর অর্ধেক লোকসান হওয়ার পর তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। কিন্তু চলতি বছর তাদের জন্য সু-খবর ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে প্রতি কাহন সুপারি ১৪শ’ টাকায় বিক্রি করছে আবার কেউ কিনে ভিজিয়ে রাখছেন।
দীর্ঘদিন থেকে জনশ্রুতি আছে ‘নারকেল সুপারির রাজধানী উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর’। এ অঞ্চলে উৎপাদিত হওয়া সুপারি, নারিকেল বেশ সুস্বাদু হওয়ায় সারাদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের প্রতিষ্ঠিত সুপারি ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর এখান থেকে সুপারি, নারিকেল সংগ্রহ করেন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা হোসেন শহীদ সোরওয়ার্দী।
রায়পুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর উপজেলায় প্রতি গ্রামে সুপারি ও নারিকেলের বাগান রয়েছে। এ বছর এসব বাগানে ১০ হাজার ২শ’ ৬৮ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি টন শুকনো সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৭৭ হাজার টাকা দরে। এ হিসাবে রায়পুরে ৭৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সুপারির ফলন হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে সুপারির উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার। একই অবস্থা নারিকেলের চাষীদের তারাও ডাব, নারিকেল ও ছোবড়া থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বছরে ব্যবসা করে।
নারিকেল ও সুপারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফোনে আলাপ করে জানা গেছে,রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া, হায়দারগঞ্জ, বাসাবাড়ি, বোয়াডার, ক্যাম্পেরহাট সহ অন্যান্য হাটবাজার থেকে তারা অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে প্রতি কাহন (১২৮০ পিচ) সুপারি ৩শ ৫০ থেকে ৫শ’ টাকা দরে কিনে নদী ও সংযোগ খালে, পুকুর ও পানিভর্তি পাতা হাউসে ভিজিয়ে রাখেন। এছাড়া উৎপাদিত সুপারির অর্ধেকের মতো শুকনোর জন্য ব্যবসায়ীরা সংরক্ষণ করেন। চলতি বছর ভেজানো সুপারির দাম কম থাকায় ব্যবসায়ীরা জুন-জুলাই মাসে বড় ধরনের লাভেরি আশায় বিক্রি করবেন ভেবেছিলেন । কিন্তু এ বছর দাম কম থাকার কারণে শুরুতেই ব্যবসায়ীরা প্রায় ভিজানো অর্ধেক সুপারি বিক্রি করে দিয়েছেন।
বাসাবাড়ি গ্রামের সুপারি ব্যবসায়ী কবির বলেন, গেল বছর সুপারি বাকিতে কেনার লোকও ছিল না। সে সময় সুপারি ভিজিয়ে আমরা যে লোকসান দিয়েছি এ বছর দাম ভালো থাকায় তা পুষিয়ে নিতে পারবো ভেবেছিলাম, এখন করোনার কারনে সুপারি মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে । বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ক্রেতাদের রায়পুরে আনাগোনাও নেই এখন।
অন্যদিকে রায়পুরে সুপারী গাছের খোল দিয়ে তৈরি উৎপাদিত পণ্যের কারখানা রায়পুর মীরগঞ্জ সড়কের তুলাতলি নামক স্থানে অবস্থিত। সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি উৎপাদিত পণ্যের কারখানাটিতে পণ্যের চাহিদা না থাকায় করোনার কারনে বন্ধ । ছোট্র ঘরোয়া পরিবেশে অবস্থিত তিনটি মেশিনের দ্বারা সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি থালা,বাটি,গ্লাস,নাস্তার প্লেটসহ বেশ কয়েকটি পণ্য তৈরি হতো।
এসব পণ্য তৈরির প্রধান উদ্যোক্তা মামুনুর রশীদ বলেন আমি আমার এই পণ্য শুধুমাত্র বানিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের দৃষ্টিকোন থেকে দেখছিনা,আমি চাইছি আমার এই কারখানায় এইসব পণ্য তৈরির মধ্যে দিয়ে দুস্থ অসহায় নারী পুরুষেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, আশাকরি করোনা ভাইরাস শেষ হলে কারখানাটি আবার চালু করবো ।
মামুন রায়পুর পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ডের মরহুম জলিল মিয়ার সন্তান, তিনি বিগত ৬ মাস ধরে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সুপারি গাছের খোল দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে ইতোমধ্যে দেশে এবং বিদেশেও রপ্তানি করার উদ্যোগ নিয়েছেন, এরইমধ্যে থালা বাটি গ্লাস ছাড়াও তিনি খোল দিয়ে বাহারি ডিজাইনের জুতা,মানিব্যাগ,ভ্যানেটি ব্যাগসহ যাবতীয় পণ্য তৈরি করার চিন্তা করছেন বলে জানান।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী জানান, মামুনুর রশিদ এর দেশীর পণ্যের শিল্পের সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। আরো বলেন আমি নিজ উদ্যোগে রায়পুরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবো দ্রুত। ।প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এ প্লেট ও ট্রে গুলি। চার ধরনে প্লেট ও ট্রে উৎপাদন হচ্ছে , ১০ ইঞ্চির গোল প্লেট, ১০ ইঞ্চি চৌকোনা প্লেট, ৬ ইঞ্চির সমান চৌকোনা এবং সাড়ে ৫ ইঞ্চি গভীর চৌকোনা-এই চার আকৃতির পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরি হচ্ছে সেখানে।
সম্পূর্ণ ন্যাচারাল এবং কেমিক্যাল মুক্ত এসব পণ্য তৈরিতে মামুন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশ ছেড়ে বিদেশেও এইসব পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মত প্রকাশ করছেন তিনি। সুপারি ও নারিকেল চাষীদের কি ভাবে এই দূর্যোগ মূহুর্তে সহযোগিতা করা যায় তা নিয়ে কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে সহযোগিতা করবো।