শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম:
সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান কামাল এমপি আর নেই বই কেনার জন্য মাইর খাওয়া! – মেহেনাজ সুলতানা যদি রেকর্ড করে শোনাতে পারতাম-ফারহানা আক্তার দৃষ্টি সাউথ এশিয়া গোল্ডেন পিস এ্যাওয়ার্ড-২০২১ পেলেন শাম্মী তুলতুল লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শেখ রাসেল দেয়ালিকা উদ্বোধন লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আব্দুল মতলব’র ব্যাপক গণসংযোগ রায়পুরে বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে ১৫ লাখ টাকার চেক বিতরণ রায়পুরে নবনির্মিত শহীদ মিনার উদ্বোধন করলেন নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি রায়পুর উপজেলা ডিজিটাল সেন্টার উদ্বোধন করেন এড. নয়ন এমপি

টমেটো কেজি প্রতি ২০! কৃষক পায় চার টাকা

/ ১৪৫০ পড়া হয়েছে:
প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন

লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে করোনায় কৃষকদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ, উৎপাদিত মূল্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত!
কৃষিপণ্য বিক্রি করেই কামলার (শ্রমিক) টাকা পরিশোধ করেন চাষি। কিন্তুু এ হাট ও হাট ঘুরেও পণ্য বিক্রি করতে না পেরে হতাশ চাষিরা । রবি ফসলের ভরা মৌসুমে করোনার প্রভাবে হাটবাজার বন্ধ। তাই কৃষিপণ্য বিক্রি করতে না পেরে উভয় সংকটে তারা। দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে চাষির। কাজ করে দিনরাত টাকার জন্য কৃষকের বাড়িতে ধরনা দিতে দেখা যাচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের।
কৃষককে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকা নতুন একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করবে। এখান থেকে শুধু কৃষিখাতে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৫ শতাংশ। তিনি বলেন, আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছি সেটা চলমান রয়েছে। সেটা হলো কেউ পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলা জাতীয় কিছু উৎপাদন করলে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। এটা আমরা আগেই চালু করেছি এটা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমরা যে নতুন স্কিমটা নিচ্ছি ৫০০০ কোটি টাকার একটা প্রণোদনা। এখান থেকে আমরা মাত্র ৫ শতাংশ সুদে কৃষকদের ঋণ বরাদ্দ দেব।
এই তহবিল থেকে গ্রাম অঞ্চলে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষী; তাদের জন্য ঋণ দেওয়া হবে। কৃষি, ফুল, ফল, মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম ইত্যাদি সকল কর্মকাণ্ডে এখান থেকে সহায়তা পাবেন। তিনি বলেন, কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করছি। কৃষি মানে গ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষী উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রায়পুরের উদমারা গ্রামের চাষি নওশের হোসেন জানান, এখন রবি ফসল টমেটো, লাউ, ঢেড়স,  পেঁয়াজ, গম, মশুর, ছোলা, মটর, খেসারিসহ অন্যান্য ফসল ঘরে তোলার সময়। কামলা দিয়ে ঠিকই ফসল ঘরে তুলেছি। কিন্তু হঠাৎ করোনার প্রভাবে হাটবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন হাট ঘুরেও তা বিক্রি করতে না পারায় কামলার টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। কোথাও কাজ নেই যে সেখানে তারা কাজ করে সংসার চালাবেন। এখন দিনরাত তারা টাকার জন্য চাপাচাপি করছেন। তাই চাষিরা এখন উভয় সংকটে।  চরপাতা  গ্রামের চাষি আবদুর রাজ্জাক জানান, তিনি পাঁচ-সাত দিন উপজেলার বিভিন্ন হাটে পণ্য নিয়ে ঘোরাঘুরি করেছেন। কিন্তু কোনো হাটেই পণ্য বিক্রি করতে পারেননি।
বরং এ মূহূর্তে পরিবহনের জন্য বেশী টাকা গুনতে হয়েছে, কিন্তু উৎপাদিত মূল্যই পাচ্ছি না। চাষিরা পণ্য বিক্রি করে কামলা, জমি চাষ, সার, ওষুধের টাকা পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তু পণ্য বিক্রি করতে না পেরে তারা কামলা, সার, জমি চাষের টাকা দিতে না পারায় পরবর্তী ফসল রোপণের প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। তাছাড়া চাষির ঘরে অতিরিক্ত পেঁয়াজ ও টমেটো রাখার গরমে তা পচন ধরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে চলাচল সীমিত। ফলে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে টমেটোর পাইকারি ক্রেতারা আসতে পারছেন না। স্থানীয় বাজারগুলোতে চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি। ফলে একদিকে কমেছে দাম, অন্যদিকে পাকা টমেটো ক্ষেতের মধ্যে রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে কৃষকের মাথায় হাত।
জেলা কৃষি বিপনন মার্কেটিং কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, প্রান্তিক চাষীরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এতে সামনের সময়টা খুব কঠিন পরিস্থিতি হতে পারে। এছাড়াও আমাদের জেলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কৃষি পণ্য মজুদের জন্য কোল্ড স্টোরেজ নেই তাই কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য করোনার কারনে ভালো বিক্রি হবে না। তবুও কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করছি প্রতিনিয়ত যেন কৃষক ন্যায্য দাম পায়।
কৃষকবন্ধু আজম খান বলেন, উপজেলার খাসেরহাট, চরবংশী, শাসেস্তানগর, বামনী, কেরোয়া, চরমোসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। রাখালিয়া  গ্রামের দিনমজুর আনিচুর রহমান জানান, সারাদিন কাজ করে মাঠ থেকে বিভিন্ন ফসল কৃষকের ঘরে তুলে দিয়ে এখন তারা মজুরির টাকা পাচ্ছেন না। তারপর কোথাও কাজ নেই। চাষিরা দোহাই দিচ্ছে, তারা কিছুই বিক্রি করতে পারছে না। এখন তারা কী করবেন! কারো জানা নেই।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী   জানান, তিনিও গ্রামে গ্রামে কৃষকদের এমন চিত্র দেখতে পেয়েছেন। চাষিরা পণ্য বিক্রি করে কামলাসহ বিভিন্ন দেনা পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তু প্রশাসন করোনার কারণে হাট – বাজার বন্ধ করে রেখেছে। তিনি চাষিদের কথা বিবেচনা করে প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে বিকল্প উপায়ে কৃষিপণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা নিয়ে কৃষি কর্মকর্তার সাথে শীগ্রই বসবেন বলে নিশ্চিত করেন।
ল/আ-মো.ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ/ডি