মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৪:১৩ অপরাহ্ন

শিরোনাম:
যদি রেকর্ড করে শোনাতে পারতাম-ফারহানা আক্তার দৃষ্টি সাউথ এশিয়া গোল্ডেন পিস এ্যাওয়ার্ড-২০২১ পেলেন শাম্মী তুলতুল লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শেখ রাসেল দেয়ালিকা উদ্বোধন লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আব্দুল মতলব’র ব্যাপক গণসংযোগ রায়পুরে বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে ১৫ লাখ টাকার চেক বিতরণ রায়পুরে নবনির্মিত শহীদ মিনার উদ্বোধন করলেন নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি রায়পুর উপজেলা ডিজিটাল সেন্টার উদ্বোধন করেন এড. নয়ন এমপি রায়পুরে করোনা আক্রান্তদের মাঝে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ উদ্বোধন শোক দিবসে লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা ও দোয়া

পূর্ব টুমচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনিয়ম দুর্ণীতি (১)

অনলাইন সম্পাদনা / ৮৮৮ পড়া হয়েছে:
প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ০৪:১৩ অপরাহ্ন

ভবনের নিলামকৃত মালামাল চুরি ও নাটকীয় তদন্তে অভিযুক্তকে নির্দোষ সাব্যস্ত


[box type=”shadow” align=”” class=”” width=””]☣ ভবনের মালামাল চুরির দায়ে সহকারি শিক্ষককে অভিযুক্ত করে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ

☣ প্রধান শিক্ষকের যোগসাজস ও দায়িত্বহীনতার অভিযোগ

☣অভিযোগ পত্রে একই স্কুলের শিক্ষকের অভিযুক্তের মেয়ের দস্তখত থাকা স্বত্বেও তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক নিরপরাধ সাব্যস্ত

☣সরকারি বিধি অমান্য করে নিলামের টাকা জমা না নেওয়া ও জামানত ফেরত

☣ঘটনা ধামাচাপা দিতে ডিপিও, টিও, এটিওকে ম্যানেজ করার অভিযোগ

☣জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের নিরবতা ও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশে অনিচ্ছুক

☣১ বছরেও নেওয়া হয়নি আইনগত ব্যবস্থা, ফাইল গায়েবের অভিযোগ[/box]

লক্ষ্মীপুর আলো রিপোর্ট ॥

জেলার সদর উপজেলার পূর্ব টুমচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের মালামাল চুরি ও চুরির ঘটনায় নানা নাটকীয়তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষক যাকে অভিযুক্ত করেছেন তাকেই আবার নিরপরাধ সাব্যস্ত করেছেন খোদ তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা শিক্ষা অফিসার। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করতে কোনরুপ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বশীল ভূমিকা না থাকায় ও শিক্ষা অফিসের নাটকীয় পদক্ষেপ ও সর্বোপরী অভিযুক্তকে শাস্তি ও খালাস ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি বেগম এর যোগসাজসে সহকারি শিক্ষক কামরুদ্দিন এ মালামাল গোপনে বিক্রি করেছেন। আর এ ঘটনায় মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নাটকীয় তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে অভিযুক্তকে নিরপরাধ সাব্যস্ত করারও অভিযোগ উঠেছে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিরুজ্জামান মোল্লার বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ২১নং টুমচর ইউনিয়নের পূর্ব টুমচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাভানা কন্সট্রাকশন লি: এর এর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আওতায় ৩৪টি স্লাইকোন সেন্টার কাম বিদ্যালয় কাজের অংশ হিসেবে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। উক্ত নির্মাণ কাজ এর জন্য ওই বিদ্যালয়ের পুরাতন ৭ কক্ষ বিশিষ্ট ভবন ভেঙ্গে ফেলা হয়। এসময় ভেঙ্গে ফেলা ভবনের ১৩,১৫৩টি ইট, ৮২০০ আরএফটি এমএস বার, কাঠের দরজার চৌকাট ৪টি, কাঠের দরজার পাল্লা ১০টি, স্টিল জানালার গ্রীল ২৩টি, গ্রীলের ফ্রেম ৮৭টি, লোহাজনিত মালামাল ৯১৪ সিএফটিসহ অন্যান্য মালামাল সিজার লিস্ট করে নিলাম আহবান করে উপজেলা শিক্ষা অফিস। সর্বোচ্চ দরে হাকিয়ে নিলাম পায় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উল্যা। এ নিলামের জামানতও জমা দেন তিনি। কিন্তু এ নিলামের পরে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারী উক্ত নিলামকৃত মালামালগুলি চুরি হয়েছে বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি বেগম। এ অভিযোগপত্রে একই স্কুলের সহকারি শিক্ষক কামরুদ্দিনকে অভিযুক্ত করেন। পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ১২জানুয়ারী ২০১৯ বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় ছুটির পর ১৪ জানুয়ারী ২০১৯ সকালে বিদ্যালয়ে এসে তিনি মালামালগুলি দেখতে পায়নি। এ অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিরুজ্জামান মোল্লা অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক কামরুদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে একই বছরের ১৪ মে কামরুদ্দিনকে চাকুরিচ্যুত না করে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এরপরে কাগজে-কলমে চুরি হওয়া মালামালের বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসের তৎপরতা স্থগিত হয়ে গেছে।

এদিকে বিদ্যালয়ের মালামাল চুরি বা আত্মসাতের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি বেগম, অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালিন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিরুজ্জামান মোল্লা ও স্কুলের দায়িত্বে থাকা এটিও হাসিনা আক্তারকে ম্যানেজ করেই অভিযোগ থেকে অব্যহতি পান শিক্ষক কামরুদ্দিন। এতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তৎকালিন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু জাফর মোঃ সালেহ বিরুদ্ধেও।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ মঙ্গলবার সরেজমিনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে এলপিআরে  যাওয়া সাবেক সহকারি শিক্ষক কামরুদ্দিন ভেঙ্গে ফেলা ভবনের মালামাল ধাপে ধাপে অন্যত্র বিক্রি করে ফেলেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি বেগম এসব জানেন ও তার যোগসাজসে হয়েছে। তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক লিখিত অভিযোগে কামরুদ্দিনকে অভিযুক্ত করলেও  দায়ের করায় কামরুদ্দিন মালামাল বিক্রির বিষয় অস্বীকার করেন।

তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি বেগম যোগসাজসের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি সহকারী শিক্ষক কামরুদ্দিনকে অভিযুক্ত করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তিতে এ বিষয়ে একটি তদন্ত হয়েছে। তবে মালামালের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিষয়টি ওই পর্যন্তই স্থগিত আছে। তিনি এসব বিষয়ে জানেন না।

তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিরুজ্জামান মোল্লা অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত কামরুদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পরে নাটকীয় এক তদন্ত রিপোর্টে একই কর্মকর্তা সন্দেহাতিত ভাবে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক কামরুদ্দিন ঘটনার সাথে জড়িত নেই বলে মন্তব্য করে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন ও তাকে চাকুরীতে পুন:সংযুক্ত করেন। তবে চুরি হয়ে যাওয়া মালামাল উদ্ধার ও চোর শনাক্তের জন্য কোনরুপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এদিকে নিলাম গ্রহিতার কাছ থেকে নিলামের পুরো টাকা জমাও নেয়া হয়নি। এসব ঘটনায় নাটকীয়তা রুপ নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এলাকাবাসী। এসব নাটকীয় ঘটনায় মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এলাকাবাসী। তবে এসব নাটকীয় তদন্ত ও মালামাল উদ্ধার না করা ও কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় খোদ তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু জাফর মোঃ সালেহ ও একই অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

এদিকে সরকারি বিধিবিধান কিংবা পরিপত্র অনুসরণ না করে নিলামে পরিত্যক্ত বিদ্যালয় ভবন বিক্রি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক। তিনি জানান, যথাযথ বিধি অনুসারে এ নিলাম হয়নি। সরকারি মালামাল চুরি করে অর্থ আত্মসাৎ করায় শিক্ষক কামরুদ্দিনের বিষয়টি দু:খজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, সরকারি অব্যবহৃত/অকেজো/ভবন/মালামাল বিক্রি করতে হলে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কনডেমনেশন কমিটির মাধ্যমে বিক্রি/নিলামের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিপত্র অনুযায়ী এ কমিটির সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক।

এসব বিষয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) হাসিনা আক্তার বলেন, গত বছর এই স্কুলের ভবনের মালামাল চুরির অভিযোগ পেয়ে ক্লাস্টার অফিসার হিসেবে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে ঘটনাস্থলে যাই। নিলামকৃত মালামাল বুজিয়ে দেওয়ার আগেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে আর কোন অভিযোগ না পাওয়ায় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে নিলাম গ্রহীতা হাফিজ উল্যা জানান, মালামালগুলি নিলামে আমি পেয়ে জামানত জমা দিই। কিন্তু পরে ঘটনাস্থলে কোন প্রকার মালামাল না পেয়ে কর্তৃপক্ষকে জানাই। এ বিষয়ে পরে আর কোন সূরাহা হয়নি।

এসব ঘটনায় লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনছুর আলী চৌধুরী বলেন, ৩৪টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে এটি জানা নেই। মালামাল চুরি সংক্রান্ত বিষয়ে আমার জানা ছিলো না। এখনো এনিয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন তা খতিয়ে দেখা হবে। তাছাড়া এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে জানান তিনি। এসময় তিনি এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার জন্য ব্যবস্থা স্কুলকে নির্দেশ প্রদান করতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বলেছেন। (পরবর্তী সংখ্যায় আসছে: স্কুলের মালামাল চুরির ঘটনায় জেলা শিক্ষা অফিসের নিরবতা ॥ পূর্ব টুমচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের টাকায় দুর্ণীতি)