দারিদ্রতার দ্বারে অসহায় রায়পুরের নিম্নআয়ের মানুষ

রায়পুর সংবাদদাতা ॥
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার অধিকাংশ জেলে, ব্যবসায়ী ও নিন্ম আয়ের দরিদ্র পরিবারগুলো ঋণের জালে বন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার উপকূলীয় চরাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে এখন জিম্মি। গ্রামীণ সমাজ উন্নয়নের নামে এসব দাদন ব্যবসায়ী ও এনজিও প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর তাদের ঋণের বেড়াজালে জড়িয়ে মানবেতন জীবনযাপন ও ভিটেমাটি হারাচ্ছে অসংখ্য পরিবার। শিল্প-কলকারাখানা ও বৃহৎ কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় এ উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ রিকশা-ভ্যান চালানো, মাছ ধরা, কৃষিকাজ, খুচরা মালামাল বিক্রয়, মুদি মালামাল, পোষাকের দোকান ইত্যাদি পেশার উপর নির্ভরশীল। এসব ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মূলধন না থাকায় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিওর দারস্থ হতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু ব্যবসা মন্দা এবং বিনিয়োগ অনুযায়ী পর্যাপ্ত বেচা বিক্রি না থাকার কারণে দিন দিন ঋণের বোঝা চেপেই বসেছে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ও জেলেদের উপর। কিন্তু তারপরেও থেমে নেই এনজিওদের ঋণ সেবার নামে সর্বশান্ত করার পাঁয়তারা।
এক এনজিওর কিস্তি শেষ হতে না হতেই এসে যায় অন্য কিস্তি। একটি সংস্থার ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে তারা অন্য সংস্থার ঋণের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ে। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারলে এনজিও কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীরা দলবেঁধে বাড়িতে এসে টাকা আদায় করে নেয়। অনেকে আবার ভয়ভীতি দেখায়, করে অসৌজন্যমূলক আচরণ, দেখা দেয় বাক-বিতন্ডা। ইতিমধ্যে অনেকে ঋণ শোধ করতে না পেরে ভিটেমাটি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে গোপনে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। বিভিন্ন এনজিও ছাড়াও অনুমোদনহীন কিছু সমবায় সমিতি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চড়া সুদে ঋণ বিতরণ করে। স্বাবলম্বী হওয়াতো দূরের কথা জেলে ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে দিন দিন আরো নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। চরআবাবিল এলাকার জেলে মোঃ বাবুল বেপারী বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ না পেয়ে একটি এনজিও থেকে ঋণ নেই। ঐ ঋণের টাকা দিয়ে মাছ ধরার জন্য নৌকা তৈরি করি। কিন্তুু মেঘনা নদীতে আগের মত জালে মাছ না পড়ায় ঋণের বিপরীতে সুদের টাকাও পরিশোধ করতে পারছিনা। ঐ এলাকার কয়েকজন জেলেও একই সুরে কথা বলেছেন। আলাপকালে হায়দরগঞ্জ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। বেচাকেনা কম হওয়ায় আর ঋণের সুদ দিতে না পারায় আমাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এরকম অনেক ব্যবসায়ী ঋণের বোঝা বহন করতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে অন্যত্র কাজের খোঁজে চলে গিয়েছেন বলে জানা যায়।
