কুমিল্লার বরুড়ায় ইউএনও ওসি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) সহ ৪০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত বুধবার বরুড়া থানার এসআই বিকাশ দাসে করোনা পজেটিভ হওয়ার পর এদে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলায় বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আনিসুল ইসলাম ও বরুড়া থানা অফিসার ইনচার্জ সত্যজিৎ বড়ুয়া। করোনা ভাইরাস যখন পুরো পৃথিবীসহ বাংলাদেশে মহামারি আকারে ধারণ করেছে সরকার থেকে নির্দেশনা আসলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে হবে। বরুড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথম ধাপে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আনিসুল ইসলাম–বরুড়া থানা অফিসার ইনচার্জ সত্যজিৎ বড়ুয়া, কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক, পৌরসভার মেয়র মোঃ জসীম উদ্দিন পাটোয়ারী, ১৫টি ইউপি চেয়ারম্যান সহ জনপ্রতিনিধিদের যৌথ উদ্যোগে জনসচেতনতাসৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে।
একজন ইউএনও ও একজন ওসি যখন সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে হিমসিম খাচ্ছেন ঠিক তখনই বরুড়া উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আরিফুল ইসলাম রাসেল ও মোঃ আবদুল মান্নান কে বরুড়া উপজেলায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এডহক ১৬ ফেরা পদাতিক ডিভিশনের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে বিশেষ টিম ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে যৌথভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন প্রতিরোদে বিভিন্ন এলাকায় হোম কোয়ারান্টাইন বা লক ডাউনে থাকা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করতে দূর দূরান্তে ছুটে যাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাঃ নিশাত সুলতানা সহ সংগীয় মেডিকেল টিম। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে যার মধ্যে ৩৫ টির মত রিপোর্ট নেগেটিব এসেছে ইতি মধ্যে আইইডিসিআর এর রিপোর্ট অনুযায়ী খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের কেমতলী ফেরদৌসি বেগম, আরিফপুর গ্রামে মোবারক হোসেন, ও বরুড়া থানায় কর্মরত এস আই বিকাশ চন্দ্র ঘোষ সহ মোট ৩জন করোনা রোগী হিসেবে সনাক্ত করায় তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের হোম কোয়ারান্টাইনে বা লক ডাউনে রাখা হয়েছে।
করোনা কে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে উঠেপড়ে লেগেছে পাশাপাশি কিছু ব্যবসায়ী যখন সামাজিক দূরত্ব বা শারিরীক দূরত্ব বজায় না রেখে দোকান খোলা রাখায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলার প্রতিটি বাজারে বাজারে ঘুরেঘুরে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে মোবাইল কোর্টে জরিমানা আদায় সহ তফসিলভূক্ত দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী (কখনও ১৮৮ আবার কখনো বা ২৬৯ ধারায়) মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
জরুরি সেবার জন্য ইউএনওর সরকারি নাম্বারের পাশা পাশি তার ব্যক্তিগত নাম্বারটি খোলা রেখেছেন। সমাজের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের কল্যানে জরুরি ত্রান সামগ্রী দ্রুত পৌছে দেওয়া সহ সরকারি সেবা প্রদানের জন্য তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়িটি উন্মুক্ত ঘোষণা করেন। যেখানে করোনা উপসর্গ রোগির সন্ধান পান, জরুরি ভিত্তিতে ঐ এলাকায় করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধের জন্য লক ডাউনের আওতায় নিয়ে আসছেন। দেশে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ৩১ দফা নির্দেশনা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে তিনি বলেন পাশাপাশি জনসমাগম রোধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের মহামারি রূপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করছেন। করোনা ভাইরাস মোকাবিলা বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আনিসুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক সাক্ষাকারে বলেন আমরা বরুড়া উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বরুড়া হাজী নোয়াব আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টিকে প্রস্তুত করেছি। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে করোনা সচেতনতায় প্রচারণার পাশাপাশি মানুষের মুখে মাস্ক ব্যবহার এবং হাত পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন করা হচ্ছে। বন্ধ করা হয়েছে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল ও সেমিনার,বন্ধ রাখা হয়েছে দূর পাল্লার গন পরিবহন। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবার আগে দরকার জনসচেতনতা। বরুড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোর মধ্যে সামাজিক সংগঠন রক্তঋন এর সদস্যদের সহযোগিতায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও এই স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ অন্যান্য কাজে উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে। তিনি আরও বলেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাঁচাবাজারে জনসমাগম রোদ করতে বাজার গুলোকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পার্শ্ববর্তী স্থানীয় স্কুল কলেজ মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমান দূর্যোগের সময়ে শ্রমিক সংকটে মধ্যে কৃষকের বোরোধান ঘরে তুলতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের এগিয়ে এসেছে। তিনি আরও বলেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর দাপন ও সৎকার সম্পন্ন করার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে। আসুন আমরা নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি রাস্তাঘাটে দোকানপাটে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ী থেকে বের না হই।
ফয়সাল রহমান ভুঁইয়া, কুমিল্লা