বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম:
যদি রেকর্ড করে শোনাতে পারতাম-ফারহানা আক্তার দৃষ্টি সাউথ এশিয়া গোল্ডেন পিস এ্যাওয়ার্ড-২০২১ পেলেন শাম্মী তুলতুল লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শেখ রাসেল দেয়ালিকা উদ্বোধন লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আব্দুল মতলব’র ব্যাপক গণসংযোগ রায়পুরে বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে ১৫ লাখ টাকার চেক বিতরণ রায়পুরে নবনির্মিত শহীদ মিনার উদ্বোধন করলেন নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি রায়পুর উপজেলা ডিজিটাল সেন্টার উদ্বোধন করেন এড. নয়ন এমপি রায়পুরে করোনা আক্রান্তদের মাঝে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ উদ্বোধন শোক দিবসে লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা ও দোয়া

ভালোকাজের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব…আহম্মদ ফয়েজ

ডেক্স নিউজ / ৫৮৩ পড়া হয়েছে:
প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

নেশা! এ শুধু খারাপ হয় এমন নয়। নেশা ভালোও হতে পারে। ভালো কাজ করার নেশা এমন এক নেশা যা কারো মধ্যে থাকলে বা তৈরি হলো মানুষ তার জন্য প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে এই প্রার্থনাই করে এই নেশা যেন কখনোই কেটে না যায়। ভালো কাজের নেশার ঘোর ভালো মানুষের মননে এমনভাবে আঁকড়ে থাকে তা হয়তো তাকেই বুঝতেই দেয়না যে সে কোন শ্রমে আছে। এটা আসলে এক রকম ইবাদত বাধ্যান।

মানুষকে তার জীবন চালিয়ে নিতে কাজের প্রয়োজন পড়ে আর এই কাজ শুধু জীবিকার জন্য হলে চলেনা কাজ করতে হয় জীবনের জন্যও। যে কাজ শুধু নিজের নয়, প্রয়োজনে আসে পুরো সমাজের সেটাই আসলে জীবনের জন্য কাজ। জীবনের জন্য কাজ জীবনকে সহজ করে, করে আনন্দময়। গত কয়েক বছর ধরে এমন একটি কাজ আমাকে রিতিমতো মুগ্ধ করে চলছে। সাহস জোগাচ্ছে, স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যেখানে সমাজের মানবিক সূচক ক্রমেই নিন্মমূখী সেখানে একটি উদ্যোগ শ্রোতের বিপরীতে দাড়িয়ে রিতিমতো একাই উড়িয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের সোপান। এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালার নাম রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব।

করোনাকালে যখন শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো নিজেদের জীবন রক্ষায় তখন উত্তাল সমুদ্রের মাঝে যেন একাই নাবিক রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব। আমি এই সংগঠনের একজন শুভাকাঙ্খী ছাড়া কেউ নয়। কিন্তু আমার কাছে বারবারই মনে হয়েছে কোন না কোনভাবে তাদের পাশে দাড়ানো প্রয়োজন, যা আমারও জীবনের দায়, জন্মের দায়।

আমি লেখালেখির মানুষ। আর্থবিত্ত দিয়ে এগিয়ে আসা সম্ভব নয়। আবার ঘায়ে খেটে যে পাশে দাড়াবো তারও কোন উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমার একমাত্র উপায় কিছু কথা লিখে রাখা যা সময়ের স্বাক্ষী হবে হয়তো। ভালো কাজে ভালোদের জানাতে পারবে অভিবাদন। এই সংগঠনের প্রধান কর্মকর্তা বা সভাপতি জনাব মাহমুদ ফারুক আমার খুব আপনজন। বরাবরই ভালো কাজে তার যে প্রবল আগ্রহ এবং নিঃশ্বার্থ এগিয়ে থাকার মনোবাঞ্চনা তা আমাকে আশাবাদী করে। কিন্তু সে তো আর একা সব কিছু করতে পারবেনা, যেখানে সমাজ-বাস্তবতা ভালো কাজ গ্রহণ করতে এখনো সার্বিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। তবুও লড়াইটা নিরলস চালিয়ে যাচ্ছিলেন এই দৃঢ়চেতা সংগঠক। কিন্তু ভালোকাজে ভালো সঙ্গী যে একটি উদ্যোগকে কতটা তড়িৎ এবং অগ্রসরমান করে তুলতে পারে তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে লক্ষ্মীপুরের একটি উপশহর রামগঞ্জ উপজেলায়।

রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব পেয়ে গেলেন দুই অভিভবাক যারা নিজেরাই সমাজ সংস্কারে প্রবল আগ্রহী ব্যক্তিত্ব বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। তাদের একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান এবং অপরজন রামগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। এই তিনজন মানুষকে রিতিমতো লড়াই করতে দেখা গেছে করোনার সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করা, গরিব অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রান সামগ্রী নিয়ে ছুটে যাওয়া এবং শেষতক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে অক্সিজেন সিলেন্ডার এবং অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করা পর্যন্ত যে মনোবল এবং দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়েছে এই সংগঠন এবং এর নেপথ্য কারিগররা তার জন্য এই উপজেলার সন্তান হিসেবে আমি তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

নিন্ম আয়ের মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা নিয়ে যেভাবে ছুটে গেছেন মুনতাসির জাহান তা শুধু সরকারের কর্মকর্তাদের প্রতি মানুষের আস্থাই বাড়াবেনা তাদেরকে আপনজন হিসেবেই স্থান দিবে হৃদয়ে। অপরদিকে সামাজিক কর্মকা-কে উৎসাহিত করতে যেভাবে উপজেলাজুড়ে তৎপরতা দেখাচ্ছেন মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তা যেন সত্যিই মানবিক পুলিশিং এর আসল রূপ। এই লেখাটি লিখতে যেয়ে বারবারই মনে হয়েছে রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য এই লেখায় থাকা প্রয়োজন। তাই সংগঠনের পথচলার শুরু, উদ্দেশ্য এবং সাম্প্রতিক কিছু কর্মকা- সম্পর্কে তথ্য সংগঠনের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাতে জানা গেল, রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব থেলাসেমিয়ামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ২০১৫ সালের ১২ মে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নামের সঙ্গে রামগঞ্জ থাকলেও সংগঠনটি ইতোমধ্যে রামগঞ্জ উপজেলাসহ জেলা ও জেলার বাহিরের বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে প্রায় দুই হাজার ব্যাগ রক্তদান করতে সক্ষম হয়েছে।

সংগঠনটির কর্মকা- সম্পর্কে জানা যায়, রক্তদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও পরবর্তিতে বৃক্ষ রোপন, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বাল্যবিয়ে রোধ, মাদক বিরোধী প্রচারনা, অসহায় ও দুস্থ্যদের বিভিন্ন সেবা, অসহায় মানুষদের ঘর নির্মানে সহযোগীতা, ডেঙ্গু ও গুজব প্রতিরোধে সচেতনতা, ঈদে পথশিশুদের মাঝে নতুন পোষাক বিতরণ, এতিমখানার শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ, কোরবানী মাংস বিতরণসহ নানা রকম মানবিককাজে সম্পৃক্ত থেকেছে। আর এর ফলশ্রুতিতে ২০১৯ইং সনে উপজেলার শ্রেষ্ট সংগঠনের স্বীকৃতিও লাভ করেছে রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাব।

জেলায় রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। তারই ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের মতো মহামারিতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার করোনা উপসর্গ বা করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফনে সহযোগীতা করতে ইসলামী ফাউন্ডেশনের দাফন টীমের স্বেচ্ছাসেবীদের যাতায়াত লাশ দাফনে স্থানান্তরের সুবিধার্থে সংগঠনের উপদেষ্টা আরপি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ফরিদ আহম্মেদ ভূইয়া একাডেমীর চেয়ারম্যান ফরিদ আহম্মেদ ভূইয়ার আর্থিক অনুদানে জুন-জুলাই ও আগষ্ট মাসের জন্য ভাড়ায় নেয়া হয়েছে একটি আধুনিকমানের অ্যাম্বুলেন্স। দাফন টীমের সদস্যদের জন্য বিপুলসংখ্যাক পিপিই, রেইনকোট, গামবুট, মাস্ক, গ্লাভসসহ সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হয়।

এছাড়া রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন ও বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির চেয়ারম্যান ও রামগঞ্জ উপজেলা সমিতির সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হক মজুর অর্থায়নে পরবর্তি সময়ে কয়েকটি অক্সিজেন সিলিন্ডার, আধুনিকমানের স্প্রে মেশিন, মাস্ক, স্যানেটাইজার, গগলসসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জেলা ও উপজেলায় গত প্রায় তিন মাসে বিভিন্ন স্তরে ছিলো লকডাউন। আর লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছেন ক্ষুদ্র আয়ের মানুষ। দিন আনতে পান্তা পুরায় যাদের অবস্থা, তাদের কষ্টের কোন শেষ ছিলোনা। আয় নেই তাই ঘরে খাবারও ছিলোনা অনেকের। বিভিন্ন রাজনৈতিকদল, সামাজিক ব্যক্তি, দানবীর ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশাপাশি রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাবের সদস্যরাও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষদের তালিকা তৈরি করে খাদেম ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, আমার লক্ষ্মীপুর ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় এপ্রিল-মে ও জুন মাসে ঘরে ঘরে চাল-ডাল-তেল-নুন-পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারপ্যাকেট পৌঁছে দিয়েছেন। রমজান ঈদে দেয়া হয়েছে চিনি সেমাই। কিন্তু লক্ষ্মীপুর জেলাসহ রামগঞ্জ উপজেলায় করোনার প্রকোপ দিন-দিন বাড়তে থাকায় ক্লাবের পক্ষ থেকে নেয়া হয় সুদূর প্রসারী পদক্ষেপ।

আগামী আগষ্ট পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষে মাস্ক, স্যানেটাইজার ও বেশ কিছু সুরক্ষা সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যেগ নেয়া হয়। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নকে ভাগ করে জনবহুল বাজারগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়ার কঠিন উদ্যেগ নেয়া হয়। পানিয়ালা, সোনাপুর ওয়াপদা সড়ক, সমিতির বাজার, পানপাড়া, সমিতিরহাঁট, ভাটরা, ভোলাকোট, করপাড়া, কাঞ্চনপুর, নোয়াগাঁও চন্ডিপুর, লামচর, ভাদুর রামগঞ্জ পৌর শহরের কয়েকটি ঔষধের দোকানে বিনামূল্যে শ্বাসকষ্টের রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিতে কাজ চলমান রয়েছে। ইছাপুর, আলীপুর, করপাড়ায়, পানপাড়া, পানিয়ালায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের দাফন টীমের সদস্যদের ভাগকরে দেয়া হয় সাধ্যমতো সুরক্ষা সামগ্রী।

রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার’স ক্লাবের এই কার্যক্রম যদি উপজেলা জুড়ে ভালো কাজে মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করে তবে এই এগিয়ে যাওয়া হবে মানুষের জন্য মানুষের এগিয়ে যাওয়া যা এই সমাজের জন্য কতটা জরুরি করোনা এসে আরো একবার বুঝিয়ে গেল আমাদের। ভালো কাজের ব্রান্ড অ্যাস্বাসেডর হয়ে এই সংগঠনের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশের সবখানে।

 

[author title=”লেখক:” image=”http://”]গণমাধ্যমকর্মী ইংরেজী দৈনিক: ডেইলী নিউ এজ[/author]

Print Friendly, PDF & Email