বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম:
যদি রেকর্ড করে শোনাতে পারতাম-ফারহানা আক্তার দৃষ্টি সাউথ এশিয়া গোল্ডেন পিস এ্যাওয়ার্ড-২০২১ পেলেন শাম্মী তুলতুল লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শেখ রাসেল দেয়ালিকা উদ্বোধন লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আব্দুল মতলব’র ব্যাপক গণসংযোগ রায়পুরে বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে ১৫ লাখ টাকার চেক বিতরণ রায়পুরে নবনির্মিত শহীদ মিনার উদ্বোধন করলেন নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি রায়পুর উপজেলা ডিজিটাল সেন্টার উদ্বোধন করেন এড. নয়ন এমপি রায়পুরে করোনা আক্রান্তদের মাঝে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ উদ্বোধন শোক দিবসে লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা ও দোয়া

হুজুগে গুজবে আমরা: সোশ্যাল মিডিয়ার এপিঠ ওপিঠ

ডেক্স নিউজ / ৬৭১ পড়া হয়েছে:
প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন

 

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা আর হাতে হাতে স্মার্টফোন মানুষকে করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমমুখী। বিশ্বায়ন আর শিল্পায়নের এ যুগে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। আর সাধারন জীবন ছাপিয়ে তাই সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে বিচিত্র সব গুজব। কখনো কখনো রাষ্ট্রীয় বড় ঘটনা যেমন ছড়ায়, ঠিক তেমনি ব্যক্তি পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়ে গুজব। না জেনে, না বুঝে যাচাই বাছাই ছাড়াই মানুষ সেগুলো শেয়ার দিচ্ছে, বিশ্বাস করছে। আর এই সুযোগটাই নিতে চায় স্বার্থান্বেষী মহল। আর নেবেই বা না কেন? সোশ্যাল মিডিয়া চালানোর ক্ষেত্রে আমরা কতটা সচেতন? একটি পোস্ট বা তথ্য সামনে এলে সেটি কতটা বিচার বিশ্লেষণ করি। একজন মানুষ কিংবা একটি ঘটনা সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরির আগেই সেটি বিশ্বাস করতে শুরু করি। ঘটনার গভীরে যাওয়া কিংবা বিষয়টির সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কোনো চেষ্টাই কারো মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। ঘটনা ব্যক্তি পর্যায়ের হোক আর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের হোক। আমরা গুজবের হুজুগে হামলে পড়ি। ফলাফল- বিভ্রান্তি আর সামাজিক নৈরাজ্য।
ফেসবুকের কথাই ধরা যাক। এক হিসেবে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ ফেসবুকের নীল জগতে বুঁদ হয়ে থাকেন। মানুষের আবেগ-অনুভূতি, মতামত, বন্ধুত্ব সবকিছু এ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে। নানা সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনের নেপথ্যেও এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ শক্তিকে ব্যবহার করে সংঘবদ্ধ চক্র ছড়িয়ে দিচ্ছে নানা ধরনের গুজব। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ফেসবুকে ছড়ানো গুজবে কান দিয়ে বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। পণ্ডশ্রম কবিতায় কবি শামসুর রাহমান লিখেছেন, এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে। কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে, আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে। ….. নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে; কান যেখানে ছিল আগে সেখানটাতেই আছে।… বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি, পণ্ড হল শ্রম। অর্থাৎ কান চিলে নিয়েছে এমন খবরে কানে হাত না দিয়েই চিলের পেছনে ছুটেছিল একদল লোক। সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেই কান চিল নেয়ার ঘটনার মতো মানুষ কোনো কিছু বিবেচনা না করেই গুজবে কান দিয়েছে, গুজব নিউজ শেয়ার করেছে কখনওবা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে সহিংস হয়েছে। গত এক বছরে গুজবের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪০ জন। গুজব ছড়াচ্ছে কেন এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ফিল্টারিং ছাড়া তথ্য বা মতামত দেয়া হয়, যেটা অনেক সময় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বলা চলে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক দিকটাও মানবসৃষ্ট। যেহেতু ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই তরুণ, তাই যেকোনো সমস্যায় বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন তরুণেরাই। সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে নেহাত মজার ছলে কিংবা ব্যক্তিগত সমস্যার জের ধরে ভুয়া খবর রটিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত ও অহেতুক হয়রানি করার ঘটনা অহরহ ঘটছে। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোকে এখন অনেকে মিথ্যা মনে করে এড়িয়ে যান। এখানে এমনকি জীবিত মানুষকে মৃত ঘোষণা করে আবার মৃত মানুষকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার মতো ভুয়া খবরও আমাদের সবার চোখেই পড়ে। একশ্রেণির মানুষ কাউকে ট্রল করতে, অন্যকে নিয়ে সোশ্যাল সাইটগুলোতে বাজে মন্তব্য করতে গিয়ে দু বার ভাবে না। উসকানিমূলক মন্তব্য করে অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোন্দল সৃষ্টি হওয়ার মতো ঘটনার নজিরও আছে। আর ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে অবলীলায় এই মানুষগুলো তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কাউকে আক্রমণ করার জন্য ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল সাইট যেন এখন ধারালো অস্ত্রের মতোই কাজ করছে।
অন্যদিকে, অনেকেই মাথায় যখন যা ঘুরপাক খায় সেটাই ফেসবুকে পোস্ট করেন, তা যতই ব্যক্তিগত হোক না কেন! আমাদের ফ্রেন্ডলিস্টের সবার সঙ্গেই যে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো এমন তো নয়। কখনো রাগের মাথায়, কখনোবা খুব ইমোশোনাল হয়ে আমরা ফেসবুকে এমন কোনো কিছু পোস্ট করে ফেলি, যেটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরক্ষণেই ডিলিট করে ফেলি। কিন্তু এটুকু সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত সমস্যাটা হয়তো অনেকের চায়ের আড্ডার মুখোরোচক বিষয় হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে যে, ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে সমস্যা শেয়ার করে সমাধান খুঁজতে গিয়ে সমস্যার সমাধান তো হয়-ই না, বরং নানা উটকো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তা ছাড়া খুব কাছের মানুষ, বন্ধু বা পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে মতের অমিল কিংবা মন কষাকষি হলে সেটাও অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ফেলেন। দুই পক্ষের এই সমস্যাগুলো অনেক সময় তারা নিজেরা চাইলেই খুব সহজে মিটমাট করতে পারেন। কিন্তু পাবলিকলি শেয়ার করার ফলে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ কখনো কখনো দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করে না দিতে পারলেও, শেষ চেষ্টা করার অবশিষ্ট পথটাও বন্ধ করে দিয়ে যায়।
তাই নিজের ব্যক্তিগত বা সামাজিক জীবনের কিছু বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠিক কতটুকু, কিভাবে উপস্থাপন করা উচিত তার একটা সীমা নির্ধারণ করে, একটু সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করলে এই সমস্যাগুলো হয়তো অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব হবে।
ফেসবুকের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এখন জনপ্রিয় এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ছড়ানো হচ্ছে ধর্মীয় বিদ্বেষ আর বিভিন্ন গুজব। এখন পর্যন্ত দেশে ধর্মকে কেন্দ্র করে যতগুলো সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সব কিছুর মূলে এ ফেসবুককেন্দ্রিক গুজব সংবাদ। এই সময়ে গোটা বিশ্ব লড়াই করছে করোনাভাইরাস মহামারির সঙ্গে। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটির সংক্রমণের পর ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। আর করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে শুরু হয় নানা ধরণের গুজব। আর এই গুজব ভাইরাসের চেয়ে বেশি দ্রুত ছড়ানোয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই প্রবণতার নাম দিয়েছে ইনফোডেমিক। আর এই জন্য ইন্টারনেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানিকে গুজবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পর কখনো শোনা গেছে নিউমোনিয়ার ওষুধ করোনার প্রতিষেধক, আবার কখনো শোনা গেছে রসুন খেলে সারবে করোনা ভাইরাস। তবে এই সব ব্যাপারকে ইনফোডেমিকের অংশ বলেই ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অর্থাৎ এগুলো আসলে গুজব। করোনা প্রতিরোধে এসবের কোন ভূমিকা নেই। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে ভারতে লাইন ধরে গোমূত্র পান শুরু হয়। বাংলাদেশে বেড়ে যায় থানকুনি পাতা আর আদা খাওয়ার প্রতিযোগিতা। কেউ কেউ ছড়িয়েছেন ধূমপায়ীদের করোনা হয় না। আবার আরেক পক্ষ ছড়িয়েছে অ্যালকোহল করোনা প্রতিরোধ করে। অথচ এতোসব গুজবের কোনটিই সঠিক নয়।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে বা ছেলেধরা বেরিয়েছে এমন গুজব সারা দেশেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায়। একদল লোক প্রকৃত ঘটনা যাচাই-বাছাই না করেই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে সন্দেহভাজনদের পিটুনি দিয়েছেন। ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ গুজবকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। ছেলেধরা গুজবে মানুষের গণপিটুনিতে প্রাণ হারান অন্তত ২০ জন। ফেসবুক ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় মেডিকেলসহ বিভিন্ন পাবলিক ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন, এসএসসি, এইচএসসি এমনকি জেডিসি বা জেএসসি পরীক্ষারও প্রশ্নফাঁস কিংবা গুজব ছড়িয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এরকম আরো অনেক রাষ্ট্রীয় বিষয় ফেসবুক আর সোশ্যাল মিডিয়ার কারনে তৈরি করেছে ভ্রান্তি আর ঝামেলার।
আর সোশ্যাল মিডিয়ার এমন যথেচ্ছ ব্যবহারের কারনে বেড়েছে সাইবার ক্রাইম ও উটকো ঝামেলাও। ইদানীং ফেসবুকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, আইডি ডিজেবল হয়ে যাওয়া। ফেক আইডি, ফেক নাম, ভুল তথ্যের কারণে তো ডিজেবল হয়ই; কিন্তু এখন যে কেউ গ্রুপিং করে রিপোর্ট করে যে কারও আইডি ডিজেবল করে দিতে পারে। কয়েকজন মিলে যদি কোনো আইডিতে প্রিটেন্ডিং রিপোর্ট করে, ফেসবুক সেটা যাচাই না করেই ডিজেবল করে দেয়; এমনকি সেটি ১০ বছর ধরে চালানো রিয়েল আইডি হলেও। আরেকটি ভয়ংকর সমস্যা হল হ্যাকিং। গ্রুপ, পেজ, আইডি সবই হ্যাক হচ্ছে। ইদানীং অনেকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হ্যাক বেশি হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ আইডি হ্যাক করে অনেক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেসবুকীয় বিভিন্ন সমস্যার মূলে আছে সিকিউরিটি সমস্যা এবং পর্যাপ্ত হিউম্যান হেল্প না থাকা। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে ফেসবুকের অফিস নেই। যেখানে আছে, সেখানেও সবার প্রবেশাধিকার নেই; কারণ তারা বলে, এসব সমস্যা তারা অফলাইনে নয়, অনলাইনেই সমাধান করে। অথচ সারা বিশ্বেই বহু মানুষ ফেসবুকের এমন বাজে পদ্ধতির কারণে ভুক্তভোগী।
সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সাইবার ক্রাইম আইনে পরিবর্তন এনেছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট এসব অপরাধীর ব্যাপারে সচেষ্ট আছে। সেখান থেকে বারবার বলা হচ্ছে গুজবে কান না দিতে। চোখের সামনে কোনোকিছু একটা পড়ল আর অমনি নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করে দিলাম এমনটা করা যাবে না। বিভ্রান্তি বা দাঙ্গা সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো পোস্ট নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করার আগে অবশ্যই তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নিতে হবে। মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়ালে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে তিন বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সবার উচিত সচেতন থাকা।
আমরা সবাই এখন কম বেশ ফেসবুক, টুইটার ও ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করি। এই সোশ্যাল সাইটগুলোতে নিজেদের ছবি দেওয়ার আগে ভালো মতো এডিট করে মোটা লাগলে চিকন করে নিই, ভালোমতো ফর্সা করি। এতে করে নিজের নিজস্বতা আর থাকে না। আমি হয়ে যাই এক অন্য আমি। আর অন্য ‘আমি’র জন্যই কমেন্ট বক্স প্রশংসায় ভেসে যায়। ইদানীং সেলফি তোলাও একটা মহামারী রোগের আকার ধারণ করেছে। আবার এই অনলাইনেই ট্রল করার ব্যাপারটাও বেশ ভালোভাবেই হচ্ছে এখন। মজার কিছু হোক বা না হোক সবাই সব জায়গায় মজা নিতে পটু হয়ে যাচ্ছে। কেউ তার বোনের সঙ্গে ছবি দিল ফেসবুকে, দেখা যাবে মানুষ কমেন্ট করছে ‘নতুন বান্ধবীর সঙ্গে ভালো লাগছে’। আবার উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারো সম্পর্কে ছড়ানো হয় মিথ্যা তথ্য। অনেকেই না বুঝে সেটিকে শেয়ার দেন। মিথ্যা এই পোস্ট বা তথ্য শেয়ারের কারনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটির কতো বড় ক্ষতি হয়ে গেল সেকথা কেউ ভাবেন না।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারীকারীদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে সংবাদ আহরণের প্রধান মাধ্যম ফেসবুক। এমনকি মূলধারার গণমাধ্যমের খবরের শিরোনামও তারা খুঁজে বেড়ান ফেসবুকে। তাই এদের কাছে ভুয়া খবর, গুজব পরিবেশন করা হলে তা চক্রবৃদ্ধিহারে সামাজিকভাবে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব টের পাওয়া যায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়ায়। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে ভুয়া খবর ও গুজবের প্রতি সরকারের যেমন মনোযোগ দেওয়া দরকার তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোরও সজাগ থাকা দরকার কিভাবে এই ভুয়া খবর ও গুজবকে ব্যবহার করে জনমতকে প্রভাবিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এবং সাম্প্রতিক কিছু বিপর্যয়ে ফেসবুক কেন্দ্রিক ভুয়া খবরের ভাইরাল হওয়া দায়ী।
তাই সবারই উচিত ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারে সচেতন হওয়া। অযথা কাউকে আক্রমণ করে পোস্ট না দেয়া, বিনা কারনে কাউকে ট্রল না করা। একটা কিছু সামনে পড়লেই সেটি শেয়ার না দেয়া। সাইবার ক্রাইম বা অপরাধ যেমন তেমন আপনার ভাবা উচিত এমন ট্রলিং কিংবা গুজবের শিকার আপনি নিজেও হতে পারেন। তাই আসুন হুজুগে গুজবে নয়- সচেতন হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোশ্যাল থাকি।

মেহেদী হাসান বাবু, সম্পাদক ও প্রকাশক, আজকের বিজনেস বাংলাদেশ

Print Friendly, PDF & Email